বাহা
আদিবাসী সংস্কৃতি
সাঁওতাল পরগনা লাগোয়া জেলা রূপে বীরভূমের কৃষ্টি ও পরম্পরার সঙ্গে সুদীর্ঘকাল ধরে জুড়ে আছে সাঁওতাল জনজাতি। মূলত প্রোটো অস্ট্রালয়েড গোষ্ঠীর অস্ট্রো এশিয়াটিক শাখার এই জনজাতি হাঁসদা, কিসকু, মুর্মু, সোরেন প্রভৃতি নানান পদবিধারী হয়ে থাকে এবং সেই অনুযায়ী তাদের জন্মবৃত্তান্তর সঙ্গে নানান টোটেমবাদ বা লোকবিশ্বাসের গল্প আছে বলে মনে করা হয়।
বীরভূমে ভাল সংখ্যা সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ আছে এবং জেলার প্রায় সব ব্লকেই নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে তারা সুদীর্ঘকাল ধরে বাস করে আসছে।
সহরায়
বাহা
জেলার যে কোন সাঁওতাল পল্লীতে গেলেই আপনি পাবেন ঘন গাছগাছড়ায় ঘেরা ছোট্ট বসতি। পরিস্কার গোবর লেপা উঠোনের সামনে নানান সাঁওতালি নকশা ও শিল্পে সাজানো মাটির বাড়ি।
বছরের যে কোন সময় এসে দেখে যেতে পারেন এই শান্তশিষ্ট কর্মময় জীবনকে। কিন্তু যদি সাঁওতালি উৎসবে আসতে চান, দেখতে চান উৎসবের রীতিনীতি তাহলে নিম্নোক্ত উৎসব গুলিতে আসার চেষ্টা করুন --
সাঁওতালি গ্রামে দুটি পূজার স্থল দেখা যায়। গ্রামের বাইরে থাকে জাহের থান আর গ্রামের ভিতর মাঝি থান। এই মাঝির থানে মারাংবুরুর প্রতীকে থাকে একটি শিলাখন্ড। সংসারের মঙ্গলকামনায় বা সামাজিক বিপর্যয় ইত্যাদিতে সকলে এই মাঝির থানে জমায়েত হয়। আর বড় কোন উৎসব বা পার্বণে মিলিত হয় জাহের থানে।
দাঁশায় পরব - দুর্গা ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত আদিবাসীপল্লীগুলিতে দাঁশায় পরব পালিত হয়।
ষষ্ঠীর দিন তুলসীতলায় মেয়েরা হলুদ , সিঁদুর, শিকড়বাকর, বেলপাতা বেল ইত্যাদি দিয়ে পুজোর জোগাড় করে হয়। মনে করা হয় হুদূর দুর্গা অসুর নিধন করে আদিবাসী সমাজকে রক্ষা করেছিল বলে এই পরব। দশমীতে (কোথাও কোথাও একাদশীতেও) পাড়ায় পাড়ায় চলে নৃত্যগীত।
সহরায় - পৌষমাসের ২৫ তারিখ থেকে এই উৎসব হয় এবং শেষ হয় পৌষ সংক্রান্তিতে। বীরভূমে এই উৎসব বাদনা নামে পরিচিত। জাহের থানে পুজো দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিনের পরব, দ্বিতীয়দিন হাঁড়িয়া ও খিচুড়ির প্রসাদ, তৃতীয়দিন খুনটো, গরুর গা আর শিং রাঙানো হয়। চতুর্থদিন পিঠেপুলি আর পঞ্চমদিনে শিকার।
এই সোরহাই বা সহরায় হলো এ জেলার সবথেকে জনপ্রিয় উৎসব।
বাহা - ফাল্গুনী পূর্ণিমায় উপোস করে মেয়েরা জাহের থানে পুজো দিতে যায়। বসন্তের রঙিন ফুলের সমারোহে এই পরব হয় বলে এর নাম বাহা পরব।
বাহা
বাহা
সাঁওতালি এই সব পরবের মূল অবলম্বন ই হলো নৃত্যগীত। নিজস্ব পোশাকে সুসজ্জিত সাঁওতাল তরুণ তরুণীর রক্তে মিশে আছে এই নৃত্যগীতবাদ্য।
সামাজিক উৎসব : সাঁওতালি যে কোন সামাজিক উৎসবের সঙ্গে জুড়ে আছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। নারী শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিয়ে করতে আসা বর আর বরযাত্রী গ্রামের বাইরে অপেক্ষা করে অনুমতির জন্য। সিঁদুর দানের পর কনেকে নিয়ে যাওয়ার সময় বর কে দিতে হয় কনেপণ। বিবাহের সময় মাদল ধামসার সঙ্গে দং নৃত্যের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম গ্রামান্তরে।
এ ছাড়া অলৌকিক বিশ্বাস ও মৃত্যুর পর শ্মশানে হয় কারাম।
কোথায় পাবেন : পূর্বেই বলা হয়েছে বীরভূমের প্রায় সব ব্লকেই আদিবাসী সংস্কৃতির নিদর্শন মেলে। তবে তারই মধ্যে মহ.বাজার, সাঁইথিয়া,লাভপুর, ইলামবাজার,নলহাটি প্রভৃতি ব্লকের আদিবাসী গ্রামগুলোতে এই পরব- উৎসব প্রত্যক্ষ করতে পারবেন।
বাহা
দাঁশায়
অন্যান্য আদিবাসী সংস্কৃতি -
সিউড়ির তিলপাড়া, রাজনগরের ভবানীপুর প্রভৃতি কয়েকটি স্থানে কোঁড়া সম্প্রদায়ের বাস। বৈশাখ মাসে অখিন পুজোয় কাঁসর, ঘন্টা, ঢাকের তালে কালীরুপী জগৎজননীর আরাধনা করে থাকে তারা।
মহম্মদ বাজারে আছে ওঁরাও সম্প্রদায়। মে মাসে পঞ্চতত্ত্বের পুজো হয় সারুল পরবকে কেন্দ্র করে। সেপ্টেম্বরে করম পরবেও তারা সামিল হয়।